ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫
সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারত থেকে কঠোর গোপনীয়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয় তাকে। গোপন নিরাপত্তা হেফাজতে (আয়নাঘরে) রাখা হলেও বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় বাতিল হয় সেই অপারেশন। পরে সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট মুক্তি পান সুব্রত।
বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি এই আলোচিত অপরাধী। সেখানে তিনি তার সন্ত্রাসী জীবনের নেপথ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিয়েছেন, যা যাচাই করে দেখছে গোয়েন্দা বাহিনী।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, সুব্রত বাইনকে দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল একটি নাটকীয় পরিকল্পনা। পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রমাণ করা।
এ জন্য সুব্রতকে বলা হয়—
একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট মালিককে ফোন করে বলতে হবে, “আমি দেশে ফিরে এসেছি, বিএনপি আমাকে এনেছে। আওয়ামী লীগের অমুক নেতাকে হত্যা করতে হবে।”
এরপর সেই ফোনকল অডিও–ভিডিও আকারে রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেওয়া হতো।
এর পরপরই তাকে গ্রেফতার করে ঘটনা সাজানো হতো বিএনপির বিরুদ্ধে।
তবে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় পরিকল্পনা থেমে যায়। সুব্রত বাইন থেকে যাওয়া ‘আয়নাঘরে’।
জিজ্ঞাসাবাদে সুব্রত জানান,
“১৯৮৩ সালে ১৮ বছর বয়সে প্রথম সন্ত্রাসী কাজে জড়াই। একদিন ব্যাডমিন্টন খেলার সময় মা’কে গালি দেয় এক ব্যক্তি। প্রতিশোধ নিতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দিই। সেখান থেকেই শুরু।”
জেলে বসেই অপরাধজগতের বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেখান থেকেই একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
২০০৮ সালে ভারত থেকে নেপালে পালিয়ে যান। সেখানে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে চৌকিদারের দায়িত্ব পান।
২০১২ সালে ৭০ ফুট দীর্ঘ একটি ত্রিকোণ আকৃতির সুড়ঙ্গ তৈরি করে কারাগার থেকে কয়েকজন বিহারিকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এর জন্য বন্দিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে কারা কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেছিলেন।
“প্রথমে গোল সুড়ঙ্গ করেছিলাম, সেটা ভেঙে পড়ে। পরে ত্রিভুজ করে বানিয়ে পালিয়ে যাই।”
ভারতে তার বিরুদ্ধে ছিল চারটি মামলা। একটি থেকে খালাস পেলেও তিনটি ছিল বিচারাধীন। ২০২২ সালে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ সরকারকে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, তিনি ‘মোহাম্মদ আলী’ ছদ্মনামে পাসপোর্ট তৈরি করে ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারতে যান এবং বারবার বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করেন। এই পাসপোর্ট জালিয়াতি ও সীমান্ত পারাপার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরকার পরিবর্তনের পর সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, কেন আবার তাকে গ্রেফতার করা হলো—সে বিষয়ে নিজেও বিস্মিত সুব্রত। তবে গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তার দেওয়া নতুন তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে বড় তদন্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
#সুব্রত_বাইন #আওয়ামী_লীগ #নির্বাচন_২০২৪ #বিএনপি #আয়নাঘর #সন্ত্রাস #গোয়েন্দা_তদন্ত #বাংলাদেশ_রাজনীতি #JointInterrogation #ElectionConspiracy