ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নতুন সচিবের সামনে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ—মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার, বিদেশি মিশনগুলোর পুনর্গঠন ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বাইরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ মোকাবিলা করে কার্যকর টিম গঠন।
গত এক বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয়তা ও কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সরকারের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ, নেতিবাচক প্রচার, ও পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তের কারণে কূটনীতিকদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে।
এক কর্মকর্তা বলেন,
"পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে এই ছত্রভঙ্গ প্রশাসনকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং কূটনীতিকদের মনোবল পুনরুদ্ধার করা।"
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দূতাবাসগুলোতে ব্যাপক রদবদল হলেও, অনেক কূটনীতিক দক্ষতা ও প্রস্তুতির ঘাটতিতে ভুগছেন। বহু কৌশলগত মিশনে মনোবলহীন নেতৃত্ব এবং নীতির অস্পষ্টতা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে দুর্বল করছে।
সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সফরকালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী সময় না দেওয়ার ঘটনাও কূটনৈতিক প্রস্তুতির দুর্বলতারই একটি দৃষ্টান্ত।
মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তর থেকে বলা হয়,
"জাতিসংঘ, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় স্পষ্ট কৌশল ও সমন্বয় ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।"
বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ বিভাজন প্রকট। সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক মেরুকরণ ও বাইরের প্রভাব প্রশাসনিক কাজকে ব্যাহত করছে। জসীম উদ্দিনের সময় এই টিম গঠন ব্যর্থ হওয়ায় সচিবালয় কার্যত নেতৃত্বহীন অবস্থায় পড়ে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন,
“সিয়ামের সফলতা নির্ভর করবে তিনি কতটা দ্রুত ও দক্ষভাবে একটি পেশাদার, বিশ্বস্ত ও আত্মবিশ্বাসী টিম গড়ে তুলতে পারেন।”
বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক কূটনীতি অত্যন্ত জটিল এক পর্যায়ে আছে—ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য কড়া অবস্থান।
এই ভিন্ন ভিন্ন শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে নতুন সচিবকে একযোগে কৌশলী, নিরপেক্ষ এবং দৃঢ় হতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসাদ আলম সিয়ামের যাত্রা এক কঠিন পরীক্ষার নামান্তর। শৃঙ্খলা ফেরানো, দূতাবাস শক্তিশালীকরণ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মোকাবিলার পাশাপাশি, তাকে হতে হবে ভবিষ্যতের কৌশলগত কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রধান স্থপতি।
দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে তার সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।