ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫
আপডেট : ২৯ মে ২০২৫
গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়ার পর চাঞ্চল্যকর এই তথ্য উঠে এসেছে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় হস্তান্তরের পর। জানা যায়, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করার পরিকল্পনা করছিল এই বাহিনী।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই হুন্ডির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা পাঠানো হয় সুব্রত বাইন বাহিনীর কাছে। ওই অর্থের মাধ্যমে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় কিলার ও শ্যুটার নিয়োগের কাজ চলছিল। প্রতিবেশী একটি দেশ থেকেই এই অর্থ পাঠানো হয়, যেখানে আওয়ামী লীগেরই কিছু নেতার সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।
বুধবার ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালত সুব্রত বাইনকে ৮ দিনের এবং অপর তিন আসামি আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ, আরাফাত ইবনে নাসির ওরফে শ্যুটার আরাফাত এবং এমএএস শরীফকে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে তোলা হলে কঠোর পুলিশ প্রহরায় মুখ ঢাকা, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে হাজির করা হয় চারজনকে। কাঠগড়ায় ওঠানোর পর খোলা হয় তাদের হেলমেট ও এক হাতে হাতকড়া।
সুব্রত বাইন এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, “আমি যা বলেছি তাই লিখবেন। ১৯৮৭ সাল থেকে কোনো প্রতিবাদ করিনি। আয়না ঘরে রড দিয়ে পেটানো হয়েছিল, সেটা কেউ লেখেনি।”
তিনি আরও জানান, ২০২২ সালে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে 'আয়নাঘরে' (গোপন আটকের স্থান) রাখা হয় এবং ৫ আগস্ট রাতে তাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। অস্ত্র রাখার পেছনে নিজের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বলেন, “কে মরতে চায়?”
ডিবি পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস কবির জানান, “তাদের কাছ থেকে রোমহর্ষক তথ্য পাওয়া গেছে। অস্ত্র, গুলি ও টাকার উৎসসহ সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অনেক খুঁটিনাটি জানা যাচ্ছে।”
তদন্তে জানা যায়, তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে অস্ত্র এনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার উঠতি বয়সি ও ‘এলিট শ্রেণির’ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এসব সন্ত্রাসীর তালিকা পুলিশে না থাকলেও তারা সক্রিয় ক্যাডার হিসেবে কাজ করছিল।
মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় অস্ত্র সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল স্পষ্ট। কুষ্টিয়ায় তাদের আস্তানা ছিল, যেখান থেকে ঢাকায় শতাধিক অস্ত্র পাঠানো হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সুব্রত ও মাসুদ।
সুব্রত বাইন গোয়েন্দাদের বলেন, ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে প্রথম সারির ‘২৩ সন্ত্রাসী’র তালিকায় রাখে। সে সময় তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং পরে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া পাননি।
৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপি নেতারা তাকে এড়িয়ে যান, যার ফলে তিনি আওয়ামী লীগের মিশনে যুক্ত হন। তখন থেকেই বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের ‘টার্গেট কিলিং’ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা নেয় তার দল।
এই হত্যাকাণ্ডের পর একদল নেতাকে অন্য দলের হাতে খুন দেখিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরির পরিকল্পনা ছিল, যাতে ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসে।
হুন্ডির টাকা পাঠানো হতো মূলত যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে। এসব অর্থ দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ ও ক্যাডার নিয়োগ করা হচ্ছিল। ডিবি সূত্র জানায়, এখন তালিকা ধরে অস্ত্র উদ্ধার ও আসামিদের ধরতে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
এই মামলার তদন্তে একদিকে যেমন উঠে আসছে দেশের রাজনীতির অন্ধকার দিক, তেমনি প্রশ্নের মুখে পড়ছে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ নীতি ও নেতৃত্ব। সুব্রত বাইন ও তার বাহিনী কতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিল, কতজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এতে জড়িত—তা স্পষ্ট হবে আসছে দিনগুলোর তদন্তে।