জাইকা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

বৃহস্পতিবার টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ড. ইউনূস মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ (MIDDI)-এ জাইকার ভূমিকা আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।

“MIDDI অঞ্চল ভবিষ্যতের বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে,” — বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের প্রবেশাধিকার ব্যবহার করে বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রবন্দর, মহাসড়ক ও রেলপথ নির্মাণ করছে, যা নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে।

জাইকার সহায়তায় গড়ে তোলা মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর-কে কেন্দ্র করে একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করছে সরকার। এর আওতায় মাতারবাড়িকে বন্দর, লজিস্টিকস, মৎস্য, জ্বালানি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রিক হাব-এ রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।

‘মেগাসিটি’র স্বপ্ন ও বিনিয়োগ আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টা বলেন,

“আমাদের স্বপ্ন হলো এই অঞ্চলকে ঘিরে একটি মেগাসিটি গড়ে তোলা।”

এই অঞ্চলে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা, আধুনিক বিমানবন্দর, এবং একচেটিয়া গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণে বাংলাদেশকে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

“বর্তমানে অন্য দেশের জাহাজ আমাদের জলসীমা ব্যবহার করে, অথচ আমরা পারছি না। এই সক্ষমতা গড়ে তুললে রপ্তানি বাড়বে, ঘাটতি কমবে।”

ড. তানাকা মন্তব্য করেন,

“এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি নেতার কাছ থেকে গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণ নিয়ে এত বিস্তারিত ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা শুনলাম।”

প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সমন্বয়

জাইকা প্রেসিডেন্ট বলেন, MIDDI প্রকল্পে জাইকার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত থাকবে, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি আনতে হবে। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিয়োগের ঘোষণা দেন, যিনি জাইকা ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করবেন।

গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সংকট

বৈঠকে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সংস্কার কর্মসূচি, গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়েও আলোচনা হয়। ড. ইউনূস জানান,

“ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে আমি আগের কাজে ফিরে যাব।”

রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। ড. ইউনূস মানবিক সহায়তা বৃদ্ধিতে জাইকার সহায়তা কামনা করেন। জবাবে ড. তানাকা আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের আগ্রহ জানান।

📌 সংক্ষেপে মূল আলোচ্য বিষয়:

• মহেশখালী-মাতারবাড়ি অঞ্চলকে অর্থনৈতিক হাবে রূপান্তর

• গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণে বাংলাদেশের উদ্যোগ

• বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো ও ফ্রি ট্রেড জোন পরিকল্পনা

• রোহিঙ্গা সংকটে জাইকার সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান

• গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি