ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পুশইন সমস্যার ভয়াবহতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। শুধু মে মাসেই সীমান্তবর্তী ১৮টি জেলা দিয়ে অন্তত ১২২১ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে চলেছে এই অনুপ্রবেশ, যা ক্রমেই রূপ নিচ্ছে এক জটিল কূটনৈতিক সংকটে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ৩ জুন—মাত্র তিন দিনে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা হয়েছে ৭১ জনকে। সবচেয়ে বেশি পুশইনের ঘটনা ঘটেছে মৌলভীবাজার জেলার তিনটি সীমান্ত দিয়ে।
বাংলাদেশ সরকার এই সংকটের সমাধান চায় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, “পুশইন সমস্যা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে বৈঠক করেছি। এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে কূটনৈতিকভাবে ভারতের সঙ্গে আলোচনা।”
তবে, বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফের কার্যক্রম যে বাড়ছে, সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজিবিও। সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হলেও দুর্গম ও জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় পুশইন ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিজিবি চিহ্নিত করেছে এমন ২৬টি হটস্পট, যেখানে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে।
এই পুশইন প্রক্রিয়া শুধু অনুপ্রবেশই নয়, বরং এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠছে।
এক হৃদয়বিদারক ঘটনায়, সেলিনা বেগম নামের এক নারী অভিযোগ করেন, ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে বিএসএফ তাদের শরীরে খালি প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে ফেনী নদীতে ফেলে দেয়। তার সঙ্গে ছিল স্বামী এবং তিন শিশু কন্যা। সারারাত তারা নদীতে ভেসে ছিলেন। পরদিন বাংলাদেশি বাসিন্দারা তাদের উদ্ধার করে বিজিবির হাতে তুলে দেন।
বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে বারবার কূটনৈতিক চিঠি পাঠালেও এখন পর্যন্ত কোনো জবাব মেলেনি। এমনকি পতাকা বৈঠকেও বিএসএফ সমস্যা অস্বীকার করছে অথবা জবাব এড়িয়ে যাচ্ছে। বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্য-প্রমাণ দেখিয়েও কোনো সদুত্তর মেলেনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “পুশইন ফিজিক্যালি ঠেকানো সম্ভব নয়। এই সমস্যা সমাধানে ভারতকে কনস্যুলার ডায়ালগের আওতায় আনতে চাই।”
তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ. ন. ম মুনীরুজ্জামান। তার মতে, "সম্ভব নয়" বলেই দায়িত্ব এড়ানো যাবে না। বরং এটি কূটনৈতিক ব্যর্থতা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর মনে করেন, কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরালো করতে হবে। দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সরাসরি আলোচনা জরুরি।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, “ভারতের কাছে জানতে চাওয়া দরকার—এই ব্যক্তিরা কোন ভিত্তিতে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে? তালিকা আছে কি? বৈধতার প্রমাণ কোথায়?” তিনি কূটনৈতিক প্রতিবাদ জোরদার করার পক্ষে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, এটি কেবল সীমান্ত সমস্যা নয়, বরং ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন। তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকেই ভারত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মনোভাব হারাচ্ছে। তারা এখন নিজেদের নির্বাচনী স্বার্থে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশকেও পাল্টা কৌশল নিতে হবে।”
৭ মে - ৩১ মে: মোট ১২২১ জনকে পুশইন
১ - ৩ জুন: নতুন করে ৭১ জনকে সীমান্তে ঠেলা হয়েছে
২৬টি হটস্পট চিহ্নিত করেছে বিজিবি
কূটনৈতিক উদ্যোগেই সমাধান সম্ভব, বলছে সরকার ও বিশ্লেষকরা
বিএসএফ কর্তৃক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে একাধিক ঘটনায়