জাহিদুল ইসলাম মেহেদী
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫
বরগুনা ও পটুয়াখালী অঞ্চলের সংরক্ষিত বনভূমিতে চলছে বেপরোয়া দখল, গাছ কাটার মহোৎসব আর ভুয়া প্রকল্পের নামে কোটি টাকার দুর্নীতি। বন বিভাগের সহযোগিতা এবং কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হারাচ্ছে তার অস্তিত্ব। ফলস্বরূপ হুমকির মুখে পড়েছে এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য।
🌲 বনের ভেতরে রাস্তা, ঘের, খামার—সব চলছে প্রকাশ্যে
বরগুনার কুমীরমারা, গোড়াপদ্মা, নিশানবাড়িয়া, তালতলী ও আমতলীর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঢুকে দেখা গেছে, সহস্রাধিক গাছ কেটে বনের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে কাঁচা রাস্তা, মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার এবং বসতবাড়ি। এসব কর্মকাণ্ড সরাসরি বন আইনের লঙ্ঘন হলেও বন বিভাগের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
🪚 করাত কল লাইসেন্স আইন লঙ্ঘন করেই চলছে অবৈধ ব্যবসা
২০১২ সালের করাত কল লাইসেন্স বিধিমালা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও বরগুনা জেলাতেই রয়েছে কমপক্ষে ২৫টি করাতকল, যা বনসীমা থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে। পটুয়াখালীসহ সমগ্র অঞ্চলে এই সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক।
🧾 বন বিভাগের বিরুদ্ধে ঘুষ ও মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ
বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম ও রেঞ্জার আখতারুজ্জামানসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন উজাড়ের অনুমতি, করাতকল চালানো, এবং মাছের ঘের বানাতে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে—জেলেদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
🛣️ ভুয়া প্রকল্পের রাস্তা বনভূমির গলা টিপে ধরেছে
২০২৪ সালের শুরুতে বরগুনার কুমীরমারা এলাকায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কোটি টাকার এক ভুয়া প্রকল্পের আওতায় সংরক্ষিত বনের ভেতরে ১৫ ফিট প্রশস্ত কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়। স্থানীয়রা বাধা দিলেও, প্রশাসন ও বন বিভাগ চুপ ছিল।
পরিবেশকর্মী আরিফুর রহমান জানান, “এই রাস্তাগুলো দিয়ে এখন মাদক পাচার, গবাদিপশু চরানো ও গাছ পাচার সহজ হয়েছে। বন নেই, আইনও নেই।”
🐟 খুটা জাল দিয়ে সাগর দখল
বরগুনার পাথরঘাটার লালদিয়ার চরে বন কেটে গড়ে তোলা হয়েছে খুটা জালের সাম্রাজ্য। এতে একদিকে যেমন মাছের রেনু মারা যাচ্ছে, তেমনি সাগরের জলসীমা দখলের ঘটনাও ঘটছে।
📢 সচেতন মহলের ক্ষোভ ও উদ্বেগ
টিআইবি সহযোগী সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটির বরগুনা জেলার সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, “সংরক্ষিত বনে সড়ক নির্মাণের প্রতিবাদ করেও ফল হয়নি। হাজার হাজার গাছ কাটা পড়েছে—এটা চরম অপরাধ। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ুর জন্য ভয়ঙ্কর প্রভাব আসবে।”
📞 প্রশাসনের নীরবতা
বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম ও রেঞ্জার আখতারুজ্জামান-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন ধরেননি বা মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
#বরগুনা_বন #ForestEncroachment #SaveForestBD #KhutaJal #EnvironmentalCorruption #CorruptForestry #বাংলাদেশ_পরিবেশ #জলবায়ুপরিবর্তন #IllegalSawmills #FakeProjects #BargunaForestCrisis