ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটিই প্রথমবার, যখন দু’দেশ সরাসরি একে অপরের বিরুদ্ধে এত ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করেছে।
৮ মে রাত, জম্মুর আকাশে উড়ল লাল রঙের ফ্লেয়ার—পাকিস্তান থেকে আসা সন্দেহভাজন ড্রোন লক্ষ্য করে গুলি চালায় ভারত। এরপর চারদিনের সংঘর্ষ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ। তবে সংঘর্ষ থামলেও থেমে থাকেনি সামরিক প্রস্তুতি ও প্রতিযোগিতা।
সামরিক উত্তেজনাকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে উভয় দেশই। প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং জনগণের সমর্থন নিশ্চিত করতে এই ড্রোন-যুদ্ধ কার্যকর প্রভাব ফেলেছে। ড্রোন প্রযুক্তি এখন দুই দেশের সামরিক নীতির অন্যতম প্রধান অঙ্গ।
বিনিয়োগ: আগামী দুই বছরে প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে ড্রোন প্রযুক্তিতে।
জরুরি ক্রয়: সামরিক খাতে ৪.৬ বিলিয়ন ডলার জরুরি বরাদ্দ, যার বড় অংশ ড্রোন সংগ্রহে।
কার্যক্রম: প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা প্রতিদিনই ড্রোন নির্মাতাদের সঙ্গে মিটিং করছেন, ট্রায়াল চাইছেন।
আইডিয়াফোর্জের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশাল সাক্সেনা জানিয়েছেন, ড্রোন এখন সামরিক পর্যায়ে ‘দ্রুত সিদ্ধান্তের’ কেন্দ্রবিন্দু।
যুদ্ধবিমানের তুলনায় কম ব্যয়ে সামরিক সক্ষমতা ধরে রাখতে ড্রোনকেই মূল অস্ত্র বানাচ্ছে পাকিস্তান।
অংশীদারিত্ব: চীন ও তুরস্কের সঙ্গে যৌথভাবে ড্রোন তৈরি করছে পাকিস্তান।
নতুন ড্রোন: 'ওয়াইআইএইচএ-থ্রি' নামে একটি নতুন ড্রোন ২-৩ দিনেই প্রস্তুত করা সম্ভব।
২২ এপ্রিল: কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলায় ২৬ জন নিহত, অধিকাংশই ভারতীয় পর্যটক।
৭ মে: ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়।
৮ মে: পাকিস্তান প্রতিক্রিয়ায় ৩০০-৪০০ ড্রোন পাঠায় ভারতের সীমান্তজুড়ে।
ভারত ব্যবহার করেছে ইসরায়েলের হ্যারপ, পোল্যান্ডের ওয়ারমেট, এবং নিজস্ব উন্নত ড্রোন।
পাকিস্তান প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করেছে ফেক রাডার ও ‘ওয়েটিং গেম’ কৌশল।
উভয় পক্ষই নিজেদের সফল দাবি করছে।
অংশুমান নারাং (ভারতের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার): ভারতের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশার চেয়েও ১০ গুণ বেশি সফল।
ওয়াল্টার লাডউইগ (কিংস কলেজ): “ড্রোন সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে কৌশলগত বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।”
মাইকেল কুগেলম্যান (ওয়াশিংটন): “কম খরচে বেশি প্রতিক্রিয়া—এটাই ড্রোনের ক্ষমতা।”
ড্রোন উৎপাদনে এখনো চীন থেকে চুম্বক ও লিথিয়াম ব্যাটারি আমদানি করছে ভারত। ইউক্রেন যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে—যুদ্ধের সময় সরবরাহ ব্যবস্থাও অস্ত্র হতে পারে।
ড্রোন প্রযুক্তিকে ঘিরে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক ভারসাম্যে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে। সরাসরি যুদ্ধ এড়ালেও সীমান্তজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ‘স্মার্ট ওয়ারফেয়ার’ এখন গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কৌশল পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করছে।
সূত্র: রয়টার্স, ড্রোন ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া, মিডল ইস্ট আই