ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫
উপদেষ্টা দাবি করেছেন, বিষয়টি ছিল ‘পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত’। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—ভিআইপি টার্মিনালের একাধিক নিরাপত্তা চেক পার হয়ে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন কিভাবে তার ব্যাগে ছিল এবং কোন আইনি প্রক্রিয়ায় সেটি হ্যান্ডেল করা হলো?
গত রোববার (২৯ জুন) সকালে ‘OIC ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম’-এ অংশ নিতে ঢাকা থেকে মারাকেশ যাওয়ার সময়, বিমানবন্দরের স্ক্যানারে ধরা পড়ে উপদেষ্টার ব্যাগে গুলিভর্তি একটি ম্যাগাজিন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তিনি মেটাল ডিটেক্টর পার হওয়ার পর আবার ফিরে এসে একটি ম্যাগাজিন তার প্রটোকল অফিসারের হাতে তুলে দেন।
মারাকেশ পৌঁছে নিজের ফেসবুক পেইজে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন:
“প্যাকিংয়ের সময় একটি ম্যাগাজিন ভুলবশত ব্যাগে থেকে গেছে। এটি সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত ঘটনা। শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে কেউ কী করতে পারে? ইচ্ছা থাকলে অস্ত্রটাও সঙ্গে রাখতাম।”
তিনি জানান, সরকারি নিরাপত্তা না থাকলে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষার জন্য লাইসেন্সকৃত অস্ত্র তার সঙ্গে থাকে।
আসিফ মাহমুদ কবে, কীভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন?
ভিআইপি টার্মিনালের একাধিক নিরাপত্তা স্তর কীভাবে এই ম্যাগাজিনকে ‘মিস’ করলো?
সাধারণ যাত্রী হলে কী এমন ঘটনায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হতো?
এর আগে, ঘোষণা না দিয়ে অস্ত্র বা গুলি বহনের কারণে সাধারণ যাত্রীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার একাধিক নজির রয়েছে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও ঘোষণাবিহীন গুলি বা অস্ত্র বহন করলে সেটি বৈধ নয়। তিনি আরও বলেন:
“যদি এমন দ্রব্য স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ে এবং যাত্রীর লাইসেন্স থাকে, তবে সেটা সঙ্গে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু কেউ লুকিয়ে আনার চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
২০১৬ সালের 'লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা' অনুযায়ী, অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে হলে কমপক্ষে ৩০ বছর বয়স এবং তিন বছর আয়কর প্রদানসহ নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। কিছু পদাধিকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিয়মে ছাড় থাকলেও, নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র বহনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন:
“এটি ছিল একটি খালি ম্যাগাজিন। ভুলবশত ব্যাগে ছিল। নেতা হলে কখনও কখনও কিছুটা সুবিধা পেয়ে যায়, সেটাও সত্য।”
তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সবাইকে সমানভাবে তল্লাশি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন:
“এই ম্যাগাজিনটি যদি শেষ স্ক্যানিংয়েও ধরা না পড়ত, তাহলে বিদেশের বিমানবন্দরে গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। এতে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হতো।”
এই ঘটনাটি শুধু একটি ভুল না, বরং এটি আমাদের ভিআইপি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইনের প্রয়োগ এবং সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে ভিন্ন আচরণের বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় অব্যাহত রয়েছে।
আসিফ মাহমুদ
, বিমানবন্দর নিরাপত্তা
, শাহজালাল আন্তর্জাতিক
, অস্ত্র লাইসেন্স
, ভিআইপি নিরাপত্তা
, বাংলাদেশ সরকার
, ওআইসি ইয়ুথ
, গান ম্যাগাজিন
, রাজনৈতিক উপদেষ্টা
, আইনি প্রশ্ন